এনামুল হাসান, বিষেশ প্রতিনিধিঃ
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই আসনে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক বলয়ের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি চিত্র ইতোমধ্যে ফুটে উঠেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যেখানে একক প্রার্থী নিয়ে সুবিধাজনক ও গতিশীল অবস্থানে রয়েছে, সেখানে বিরোধী দল বিএনপির তিনজন নেতা ‘চূড়ান্ত সিগন্যাল’-এর অপেক্ষায় নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে এখন এই প্রার্থীদের সাংগঠনিক শক্তি ও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপরই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ।
যশোর-৬ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি সুসংগঠিত সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে একক প্রার্থী নিয়ে এগিয়ে আছে।কেশবপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক মুক্তার আলী এই আসনে জামায়াতের একমাত্র সম্ভাব্য প্রার্থী। তিনি শুরু থেকেই এলাকায় সক্রিয়ভাবে গণসংযোগ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রয়েছেন। একক প্রার্থী হওয়ায় জামায়াতের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের ভিত্তিতে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন, যা মাঠের কার্যক্রমে দৃশ্যমান গতি এনেছে। স্থানীয়দের মতে, তাঁর জনপ্রিয়তা ও একক সাংগঠনিক সমর্থন দলটিকে সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে।
অন্যদিকে, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির তিন প্রভাবশালী নেতা এই আসনে দলীয় প্রতীক বা কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের ‘সিগন্যাল’-এর অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে ৩১দফার লিফলেট বিতারণ, জনসংযোগ ও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। জাতীয়তাবাদী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এবং বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম (শ্রাবণ) তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাঁর একটি বিশেষ আবেদন রয়েছে। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা এবং ছাত্রদলের সাবেক শীর্ষ নেতা হওয়ায় সাংগঠনিকভাবেও তিনি প্রভাবশালী।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন আজাদ তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত পরিচিত ও অভিজ্ঞ নেতা। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে। তৃণমূলের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন তার সহধর্মীনি রেহেনা আজাদ। যিনি কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু তিনি কেন্দ্র ও স্থানীয় পর্যায়ে সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করছেন। সাংগঠনিক কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
বিএনপির এই তিন প্রার্থীর কেউই এখনো চূড়ান্ত মনোনয়নের নিশ্চয়তা পাননি, ফলে তাদের নির্বাচনী কৌশল এখনো কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতে, প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়নই বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি ও নির্বাচনী তৎপরতার গতিপথ নির্ধারণ করবে।
এলাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আসনে বিরোধী রাজনৈতিক বলয়ের ভোটের ফলাফল অনেকাংশে নির্ভর করবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত এবং প্রার্থী মনোনয়নের কৌশল-এর ওপর।
জামায়াতের একক প্রার্থী যেমন তাদের সাংগঠনিক শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করেছে, তেমনি বিএনপির একাধিক প্রার্থীর তৎপরতা স্থানীয় রাজনীতিতে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে। জোটগত নির্বাচন হলে প্রার্থী কে হন, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। দলগুলোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার পরই এই আসনের নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ পরিষ্কার হবে এবং ভোটের মাঠের প্রকৃত চিত্র উন্মোচিত হবে।