• বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫০ পূর্বাহ্ন
Headline
যশোরে যুবদল নেতা উজ্জ্বল বিশ্বাস কারাগারে নিহত ভোট ৮ ফেব্রুয়ারি, তফসিল ঘোষণা ১১ ডিসেম্বর কেশবপুরে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল এডভোকেট বদরুজ্জামান মিন্টুর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন  সুখবর পেলেন পৌর বিএনপি নেতা বাবু কেশবপুরে বিএনপির প্রার্থী শ্রাবণের সাথে শিক্ষকদের মতবিনিময় সভা কেশবপুরে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে এক থাইমিস্ত্রির মৃত্যু কেশবপুরে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত , কেশবপুরের কৃতি সন্তান মানবিক ডা.মো.আজিজুর রহমান লিটু (লালন) সহ জনসংখ‍্যা বিষয় সম্পাদক কেশবপুরে দখল হওয়া নদী পরির্দশনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান

শিক্ষক কর্মচারীদের আন্দালনের আন্তপান্ত

Reporter Name / ২৫ Time View
Update : বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

(সংগৃহিত)

মোঃ কামরুজ্জামান

সহকারী শিক্ষক

মূলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়

শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। অথচ ওই শিক্ষকরা নূন্যতম বেঁচে থাকার তাগিদে স্বাধীনতার ৫৪ বছরে মাথায় এসে এ পর্যন্ত যা পেয়েছে তা আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করেছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পার হলেও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষকদের মূল স্কেলের শতভাগ বেতন বিষয়টি পূরণ হলে বৈষম্য রয়েই গেছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ত্রিশ হাজার বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ছয় লাখ শিক্ষক কর্মচারী রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ৩ শতাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান। ফলে দেশের ৯৮% ছাত্র-ছাত্রীই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি দু’টি শব্দ শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবধান করে রেখেছে। ফলে বেসরকারি স্কুল ও কলেজ শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার। একই যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি, একই বিভাগে একই সিলেবাসে ও পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্যক্রমে পাঠদান, এক ই নিয়ম কানুনে একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং একই সমাজে বসবাস করেও বেসরকারি শিক্ষকদের জীবন নানাভাবে পিছিয়ে রয়েছে।

১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক স্কুল ও শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয়করণ করার সময় মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাকেও পর্যায়ক্রমে সরকারি করবেন একটি প্রতিশ্রুতি ছিল। এর পরবর্তী বিভিন্ন সরকার বাহাদুরগন নানাবিধকারণে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হাসিলের লক্ষ্যে তারাও প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। কিন্তু ফলাফল শূণ্য।

অতীতের প্রতিটি সরকারের আমলে শিক্ষকরা ধর্মঘট, হরতাল, কর্মবিরতি, সমাবেশ, মহাসমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন কর্মসূচি স্মারকলিপি পেশ, আলোচনা,পর্যালোচনা, মিটিং, মিছিল, কালো ব্যাচ ধারণ, কালো পতাকা উড্ডয়ন,এমপি-মন্ত্রীদের সাথে সাক্ষাৎ ও একশত টাকায় ঘর বানিয়ে রাত্রি যাপন ইত্যাদি কর্মসূচিগুলো দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পালন করছে। শিক্ষকদের পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়ে ঢাকার রাজপথ থেকে বাড়ি আসতে হয়েছে। দেশের কোনো বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার বিষয়টিও রেডিও-টেলিভিশনে ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে ঘোষণা করে দেয়া হয় নি। কেবল দেয়া হয়েছে প্রায় ছয় লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা। আর এটাকে বলা হতো অনুদান।

যতদূর জানা গেছে, দেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বেসরকারি শিক্ষকরা সর্বপ্রথম বেতন স্কেলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। অধ্যক্ষ কামরুজআমান ও জয়নাল আবেদিন চৌধুরীর নেতৃত্বে দেশের স্কুল ও কলেজ শিক্ষক কর্মচারীরা এ আন্দোলন করে। এতে প্রায় ৩ মাস ধর্মঘট চলছিল। তখন বছরে একবার স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা বেতন পেত মাসিক বিশ টাকা হারে একত্রে এবং কলেজের শিক্ষকরা পেত ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা। এ আন্দোলনের ফলে স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের বেতন ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা এবং কলেজের শিক্ষকদের বেতন ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় উন্নীত করেন। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী শিক্ষার মান বাড়াতে শিক্ষকদের বেতন দু’শ টাকায় বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে তা লাল ফিতার চাপে থেমে যায়।

এরপর ১৯৭৯ সালে তৎকালীন শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তৎকালীন মন্ত্রী আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণের জন্য তখন তিনি একটি কমিটি গঠন করেন। ঐ কমিটির অন্যান্য সদস্য ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান, স্কুল শিক্ষকদের পক্ষে শিক্ষক নেতা আবদুল মান্নান, কলেজ শিক্ষকদের পক্ষে অধ্যক্ষ শহীদুল্লাহ। এ সময় জাতীয়করণসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে শিক্ষকদের আন্দোলন চলছিল। ঐ কমিটির সুপারিশ মতে তৎকালীন অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারিতে সর্বপ্রথম বেসরকরি শিক্ষকদের একটি বেতন স্কেল নির্ধারণ করা হয়। ফলে শিক্ষক কর্মচারীদের মূল বেতনের ৫০% সরকারি কোষাগার থেকে দেয়ার রেওয়াজ চালু হয়। এটার পর ১৯৮২ সালের জুলাই থেকে শিক্ষকগণকে ১৫ % মহার্ঘ্য ভাতা দেন। যা ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পান। ১৯৮৩ সালের মার্চ হতে শিক্ষকদের দাবির পরিপেক্ষিতে ওই ১৫% থেকে আরো ১৫% মহার্ঘ্য ভাতা বৃদ্ধি করে ৩০% উন্নীত করেন।এরপর বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা আবার আন্দোলনে নামেন। ফলে ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি হতে সর্বপ্রথম বেসরকারি স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের বেতন ভাতা ঐ ৫০% এম পিও প্রথার মাধ্যমে ৩ মাস অন্তর অন্তর দেয়া শুরু করেন। যা শিক্ষকরা তখন ব্যাংকের কাঁচের দেয়াল ভেদ করে আসতে চার কি পাঁচ মাসের মাথায় পেত। এছাড়াও প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র একটি ইনডেক্স নাম্বার প্রদান করা হয়। এতে শিক্ষক-কর্মচারদের চাকুরির ভীত মজবুত হয় । কেননা স্কুল ম্যানেজিং কমিটির দাপটে অনেক শিক্ষক-কর্মচারদের চাকুরি চলে যেত কিংবা কথায় কথায় চাকুরি থেকে বাদ দেয়ার কথা বলতেন। ১৯৮৬ সালে শিক্ষকরা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃত্বে আন্দোলনের অবস্থান নেন। পরে ঢাকার বিজয় স্মারণীতে মাওলানা এম.এ মান্নানের পরিবর্তে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল-শিক্ষক কর্মচারীদের দাবি আদায় করা। যা শিক্ষকগণ ১৯৮৬ সালের মার্চ পর্যন্ত পান।পূর্বের বেতন ঠিক রেখে তৎকালনি সরকার এতে তিনি ৬০ টাকার মেডিকেল ১শ’ টাকায় উন্নীত করেন। শিক্ষকদের দাবিতে ১৯৮৬ সালের জুলাই হতে শিক্ষক-কর্মচারীদের ১০ % বেতন ভাতা বাড়িয়ে ৭০ % উন্নীত করেন । যা শিক্ষকগণ ১৯৮৯ সালের জুন পর্যন্ত পান। তিনি শিক্ষক- কর্মচারীদের জন্যে কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনেরও ঘোষণা দেন। । ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে শিক্ষকদের সরকারি বেতনভাতা ঠিক রেখে কেবলমাত্র ১০ % মহার্ঘ্যভাতা প্রদান করেন। এ ছাড়াও ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারিদের প্রচলিত বেতন স্কেল পরিবর্তন করে ৭ শ’ টাকার স্থলে ৮ শ’ টাকায় উন্নীত করেন। এরপর সরকার ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর থেকে পুর্ববর্তী সব ঠিক রেখে ২০% আবার মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করেন। ১৯৯২ সালের জুলাইতে নতুন জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভূক্ত করেন। যা শিক্ষক কর্মচারীগণ ১৯৯৪ সালের জুন পর্যন্ত বেতন ভাতা পান।

১৯৯৪ সালে একশ’ ভাগ বেতন বৃদ্ধির জন্যে ঐ আমলে শিক্ষকদের আন্দোলনটি অত্যন্ত জোড়ালো রূপ নেয়। ১৫ দফা আদায়ের লক্ষ্যে শিক্ষকরা এ আন্দোলনে যোগদান করেন। এ সময় সকল শিক্ষক সংগঠনগুলো একত্রিত হয়ে একটি জাতীয় লিয়াঁজো কমিটিও গঠন করেন। নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান,শেখ আমানুল্লাহ ও শিক্ষকদের অবিসংবাদিত নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ ও অধ্যক্ষ আসাদুল হক। এ আন্দোলনটি প্রায় ৩ মাস স্থায়ী ছিল।

এ সংগঠনটিরই বিভিন্ন কর্মসূচির এক পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষা বর্জন সহ ঢাকার রাজপথে হরতাল আহ্বান করেছিলেন। পুলিশ শিক্ষকদের ওপর লাঠি চার্জও করেন। জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে সরকারি প্রেস নোট পুড়িয়ে আন্দোলনের তীব্রতা প্রকাশ করে। এসএসসি পরীক্ষাও বর্জন করা হয়েছিল ঔ বছর। এর ফলে ১৯৯৪ সালের জুলাই হতে চিকিৎসা ভাতা ১৫০ টাকা প্রদানসহ একটি টাইম স্কেল প্রদান করেন। ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পূর্বের সব কিছু বহাল রেখে তৎকালীন সরকার ১০% বেতন বৃদ্ধি করে ৮০% শিক্ষকদের বেতন ভাতায় উন্নতি করেন।

১৯৯৬ সালে শিক্ষকরা আন্দোলনের ডাক দেন। এসময় অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ ও শিক্ষক নেতা অধ্যাপক আসাদুল হকের নেতৃত্বে শিক্ষক ফেডারেশন এবং শেখ আমানুল্লাহ ও সেলিম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে শিক্ষক সমিতি ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। ১৯৯৭ সালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষকদেরকে জাতীয় পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করেন । ১৯৯১ সালের পে-স্কেলে মেডিকেল ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট প্রদান করেন। তৎকালীন সময়ে দেশের সকল বেসরকারি স্কুল-কলেজে ও মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীদেরকে প্রতি মাসে বেতন প্রদানের লক্ষ্যে স্ব-স্ব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বেতন ভাতার সরকারি অংশ দেয়ার রেওয়াজ চালু করেন। (এর পূর্বে কেবলমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ থলে কিংবা কাগজের ঢোঙ্গায় মুড়িয়ে সকল শিক্ষক কমচারীদের বেতন তুলে প্রতিষ্ঠানে এনে বন্টন করতেন, এতে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ এ বাবত টাকা কেটে রাখতেন। ফলে শিক্ষকদের মনে কিছুটা কষ্টের উদ্বেগ হয়)

অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু অনিয়মও দূরীভূত হয়। ওই সময় থেকেই বর্তমান শিক্ষকরা তাদের বেতন ভাতাদি ব্যাংক চেকের মাধ্যমে তোলার সুযোগ পাচ্ছে। এতে শিক্ষকদের আত্ম-মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তৎকালীন শিক্ষক সংগঠনের কিছু অবিসংবাদিত নেতাদের চেষ্টায় সরকারের কাছে শিক্ষকদের কল্যাণ ট্রাস্টে তহবিল ১০০ কোটি টাকা দেয়ার আহ্বান জানান। এ অবস্থায় ১৯৯৭ সালে এ অজ্ঞাত কারণে শিক্ষক সংগঠনগুলো একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ সময় কাজী ফারুক ও আসাদুল হক শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন, শরীফুল ইসলাম ও সেলিম ভূঁইয়া শিক্ষক কর্মচারীর ঐক্যজোট ও ড.আখতারুজ্জামান এবং আব্দুল আউয়াল শিক্ষক ঐক্য পরিষদ গঠন করে বিভক্ত হয়ে পৃথক পৃথক আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এতে কেন্দ্র থেকে জেলায় ও উপজেলা পর্যন্ত এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরই এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এ.এইচ.এম সাদেক সাহেব সকল নেতাদের নিয়ে ২০০০ সালের ২৪ আগস্ট একটি গোল টেবিল বৈঠক ডাকেন। ওই বৈঠকে শিক্ষক-কর্মচারীদের ৯ দফা দাবি’র একটি চুক্তি হয়। সম্ভবত চুক্তির শর্তে ২০০০ সালের ১ জুলাই হতে শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ভাতা ১০% বৃদ্ধি করে ৯০% উন্নীত করেন তৎকালীন সরকার ।

পরবর্তীতে বেসরকারি শিক্ষক- কর্মচারীদের আন্দোলন আবার বেশ চাঙ্গা হলেও দাবি আদায়ের আন্দোলন তেমন অগ্রগতি হয়নি। তবে কিছু নিয়ম কানুন সংশোধন করা হয়। ২০০১ সালের ২ জুলাই কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে বাড়ি ভাড়া, মেডিক্যাল ভাতা বৃদ্ধি, উৎসব ভাতা ও ইনক্রিমেন্টের দাবিতে পুনরায় আমরণ অনশন কর্মসূচি দেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের তীব্রতায় ২০০২ সালে শিক্ষকদের অবসর সুবিধা আইন করে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এটি চালু করা হয় এবং শিক্ষকদের বেতন স্কেলের ২৫% এবং কর্মচারীদের ৫০% উৎস ভাতা প্রদান করেন। সরকারকে শিক্ষকদের উৎসব ভাতা প্রদান ও অবসর সুবিধা আইন তৈরি করায় শিক্ষক সমাজ অভিনন্দন জানান। তবে আংশিক উৎসব ভাতার রেওয়াজ দেশের কোনো বিভাগে নেই বলেও বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনগুলো সরকারকে জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই দেশের সকল শিক্ষক কর্মচারী কাছ থেকে কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা ফান্ডে জমা দানের লক্ষ্যে প্রত্যেক শিক্ষক কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৬ % হারে কেটে রাখার রেওয়াজ চালু হয়।

২০০৬ সালে সেপ্টেম্বরে শিক্ষকদের শতভাগ বেতন ভাতার জন্যে অনেক দেন-দরবারই করেছেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। অত:পর শিক্ষকদের শতভাগ বেতন ভাতার বিষয়টি সরকার ৫% বৃদ্ধি ও শতভাগের বাকি ৫% একধরণের বন্ডের মাধ্যমে দেয়ার প্রস্তাব করেন। পরের বছর ২০০৭ সালে সরকার বাকি ৫% দিয়ে শতভাগ দাবিটি পুরণ করেন তৎকালীন সরকার। যা দেশের বেসরকারি শিক্ষকদের আন্দোলনের ধারাবাহিক ফসল ও ইতিহাসের পাতায় একটি মাইলফলক হয়ে রইল । ২০০৮ সালে তৎকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনগুলোর দাবিতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০১২-১৩ সালের জুলাই মাসে বাড়ি ভাড়া ৩০০ থেকে ৫০০ ও মেডিক্যাল ভাতা ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত করেন ও ২০% মহার্ঘ্য ভাতা দেন। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে জুলাই মাস থেকে দেশের সকল স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে অষ্টম জাতীয় স্কেলের অন্তর্ভূক্ত করেন। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হওয়া উচিৎ ছিল ।

২০১৬ সালে শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি ও বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে আবার বাড়ি ভাড়া ৫’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা এবং মেডিক্যাল ভাতা ৩ শ’ টাকা থেকে ৫ শ’ টাকায় উন্নতি করেন। ২০১৫ সালে ঘোষিত জাতীয় বেতন কাঠামোতে এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের গ্রেড অনুযায়ী মূল বেতন, বাড়ি ভাড়া ভাতা ১ হাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫ শ’ টাকা, উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৪ ভাগের একভাগ। বৈশাখি ভাতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়ার কথা থাকলেও বেসরকারি শিক্ষকরা এ বছরও বৈশাখি ভাতা পান নি । যার ফলশ্রুতিতে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েই গেছে। বর্তমানে শিক্ষকদের প্রাপ্তিতে রয়েছে-প্রায় ছয় লাখ এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি ‘শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূর করা। ২০১৮ সালে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণসহ ১১ দফা দাবি নিয়ে সারাদেশের শিক্ষক সংগঠনগুলো জেলা-উপজেলায় শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রাম কমিটি গঠন করে ১৪ মার্চ ‘ চল চল ঢাকা চল ’মহাসমাবেশের ডাক দেয়। সমাবেশটি কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে হওয়ার কথা থাকলেও তা অজ্ঞাতকারণবশত জাতীয় প্রেস ক্লাবে সামনে দেশের শিক্ষকসমাজ সড়কেই অবস্থান নেয়্ । কিন্তু ফিরতে হয় খালি হাতে।

শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণেই শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক সুরক্ষা এবং শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা পাবে। শিক্ষা ও শিক্ষকদেরকেই জাতীর মেরুদন্ড বলা চলে। শিক্ষকদের অধিকার নিশ্চিত হলে যোগ্য ব্যক্তিরা শিক্ষকতার মত মহান পেশায় প্রবেশ করবে। যা জাতি গঠনে তারা ভূমিকা রাখবেন। একটি দেশের ৯৮% শিক্ষক যদি নানা বৈষম্যের ভেতর জীবন-যাপন করে তাহলে সুস্থ মানব সন্তান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি কীভাবে হবে। দেশে শিক্ষক সমাজ মনে করে বর্তমান সরকারের শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে শিক্ষাকে জাতীয়করণ অপরিহার্য। তাঁদের আর্থ-সামাজিক সুরক্ষা ও সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এর বিকল্প হলো সরকারের ইচ্ছা। এরপরও দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো সরকারি,বেসরকারি,মাদ্রাসা,কারিগরি সহ বহুধা বিভক্ত। সারা দেশের এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে ২% শিক্ষার্থী এসব সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বল্প ব্যয়ে পড়াশুনা করার সুযোগ পাচ্ছে । দেশের বাকি ৯৮% বেসরকারি শিক্ষা প্রতষ্ঠানে পড়াশুনা করছে সুবিধা বঞ্চিত, নিম্মবিত্ত , নিম্ম মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক আয়ের জনগোষ্টীর সন্তানেরা। যাদের সামর্থ সীমিত অথচ শিক্ষা খাতে ব্যয় অনেক বেশি।

সারা দেশে এ সব প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করছে প্রায় ৪ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দু’ধারা সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আবার শিক্ষকদের মধ্যে এমপিওভুক্ত ও নন এমপিওভুক্ত সহ বহুধারায় বিভাজিত সমযোগ্যতার শিক্ষক রয়েছে। তাদের বেতন ভাতায়ও ব্যাপক বৈষম্য বিরাজমান। এটি একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকদের মধ্যে থাকা কতটুকু যুক্তিযুক্ত ।

৫ আগষ্ট ২০২৪ গন অভ্যুত্থানের পর সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে যখন সকলে সরব তখন বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ছয় লাখ শিক্ষক কর্মচারী তাদের পূর্বের বৈষম্যে জর্জরিত। তাদের কথা ভাবার কেউ নেই। ২০২৫ ফ্রেবুয়ারী থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও তারা কোন কার্যকর পদক্ষেপ এখনো গ্রহন করা হয়নি। ২০২৫ সালের ১৩ আগষ্ট লাখো শিক্ষক কর্মজারী জাতীয় প্রেসক্লাবে জমা হলে তাদের সাথে আলোচনায় বসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বলা হয় সরকারের সক্ষমতা বিবেচনায় ২০% বাড়ি ভাড়া, ১৫০০ টাকা মেডিক্যাল ভাতা ও কর্মচারীদের ৭৫% উৎসব ভাতার ব্যবস্থ্যা করা হবে। দুই মাস সময় নিয়েও তারা তাদের কথা রাখেনি। ১২ অক্টোবর সারা দেশের লাখ লাখ শিক্ষক কর্মচারীদের পথে নামতে বাধ্য করা হয়েছে। এ দায় কার, কেন শিক্ষক সমাজ শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে মাঠে পড়ে থাকবে। প্রশ্ন থাকলো জাতীর কাছে…..

সংগৃহিত তথ্য (তথ্য ভূল থাকলে ক্ষমা প্রার্থী


আপনার মতামত লিখুন :
More News Of This Category